রবিবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

রাজ্য | ‌Bengal Education: পশ্চিমবঙ্গ হোক দেশের শিক্ষাতীর্থ, তবেই শিল্পে আসবে নবজাগরণ

Rajat Bose | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৩ : ৩১Rajat Bose


ড. শঙ্কু বসু (‌গ্রুপ সি ই ও, টেকনো ইন্ডিয়া)‌ :‌ বাংলা চিরকালই কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। অতীত সেই সাক্ষীই দিচ্ছে। এই বাংলায় এমন কিছু অনন্যসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন যাদের অবদান আজও অনস্বীকার্য। যদি সমাজ সংস্কারকের উদাহরণ দিতে হয় তবে প্রথমেই উঠে আসবে রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা। যারা এই বাংলায় ‌‌‘‌রেনেসাঁ’‌ বা নবজাগরণের সলতে পাকিয়েছিলেন। যা প্রভাবিত করেছিল সমাজের বুদ্ধিজীবীদের। যার জন্যই এই বাংলায় উঠে এসেছিলেন একের পর এক প্রথিতযশারা। মেলে ধরেছিলেন তাঁদের উৎকর্ষের ডানা। 
হাতের কাছে রয়েছে একের পর এক প্রমাণ। সাহিত্য থেকে শিল্প। বিজ্ঞান থেকে চলচ্চিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম যেমন, তেমনি আছেন বিজ্ঞানচর্চার জনক সত্যেন্দ্রনাথ বোস, জগদীশচন্দ্র বসু বা মেঘনাদ সাহারা। আছেন চিত্রকলায় অসামান্য প্রতিভার অধিকারী যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সঙ্গীত জগতে আজও ধ্রুবতারা হয়ে আছেন পন্ডিত রবি শঙ্কর, কিশোর কুমার, এস ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখার্জি এবং মান্না দে’‌র মতো প্রতিভারা। চলচ্চিত্র জগতে জ্যোতিষ্ক হয়ে আছেন সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের মতো কিংবদন্তিরা। ফলে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের সুদৃশ্য নকশাটা বাংলার পরতে পরতে বোনা হয়ে গেছিল। একইসঙ্গে রয়েছে মুক্ত চিন্তার প্রভাব। যার জন্য বাংলা পেয়েছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীকে। যিনি আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই রাজ্যই দেশকে দিয়েছে চার চারটি নোবেল পুরস্কার। যা বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করেছে ভারতকে। এঁদের মধ্যে মাদার টেরেজা মানবকল্যাণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন এবং অভিজিৎ ব্যানার্জি আদৃত তাঁদের জ্ঞান পিপাসার জন্য। আর যদি শুধু কলকাতার কথাই বলতে হয় তবে উঠে আসবে স্যার রোনাল্ড রস এবং সিভি রমনের নামও। কারণ, তাঁরা যে যুগান্তকারী কাজটা করে গেছেন তার অধিকাংশই সম্পন্ন হয়েছে এই শহরে। ইচ্ছে করলেই এই ধরনের উদাহরণ কিন্তু আরও অনেক দেওয়া যায়। যেমন চলচ্চিত্র জগতে সারাজীবনের অবদানের জন্য সত্যজিৎ রায়ের ‘‌অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’‌ লাভ বা কৌশিক বসুর ‘‌হামবোল্ড’‌ পুরস্কার প্রাপ্তি বা কলা এবং দর্শনে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক–এর কিয়োটো পুরস্কার পাওয়ার মতো ঘটনা হল বাংলার মেধা এবং তার উৎকর্ষের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি। 
এইমুহূর্তে অনেকেই অনুভব করেন বাংলার এই গৌরবের নদীতে আজ জায়গায় জায়গায় চর জেগে উঠেছে। মেধার ক্ষেত্রে এই যে ক্ষয়িষ্ণুতা তার পিছনে কারণগুলি হল দীর্ঘ সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা এবং সরকারি ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব হল ভাল সুযোগ খুঁজতে বাংলার মেধার অন্যত্র চলে যাওয়া। যা প্রকারান্তরে দুর্বল করেছে এই রাজ্যকেই। 
আশার কথা, হারিয়ে যাওয়া এই গৌরবের পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে একদশকেরও বেশি আগে। এর জন্য যেটা করা দরকার তা হল এর গোড়ায় গিয়ে সঠিক কারণ অনুসন্ধান এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। সেটা যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভাল। বাংলা কিন্তু বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। যার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও নিয়ম নীতি সংস্কার। গড়ে তুলতে হবে শিক্ষা ও উদ্ভাবনের আদর্শ পরিবেশ। যাতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এই রাজ্য জাতীয় স্তরে একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে বিকশিত হয়। 
আর এই আকাঙ্ক্ষার চূড়ায় পৌঁছতে গেলে প্রয়োজন বাংলার জেলাগুলিকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিকরণ ও সেখানকার সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগানো। জাতীয় স্তরে এই মুহূর্তে বাংলার একাধিক উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান খ্যাতি ও গুরুত্বের দিক থেকে কিন্তু ওপরের সারিতেই আছে। এই রাজ্যের ঐতিহ্যের পরম্পরা ও বিদ্যাচর্চায় উৎসাহ দান সবসময়ই আকৃষ্ট করেছে জ্ঞানী ও পন্ডিতদের। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই বাংলার যে সমস্ত প্রতিভা আছেন তাঁরা জ্ঞানের প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। বহুমুখী সংস্কৃতি এবং তার যথার্থ প্রতিপালন, যার মধ্যে দিয়ে এই রাজ্য হয়ে উঠেছে বহু ভাষাভাষী ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের পড়ুয়াদের কাছে কাম্য গন্তব্যস্থল। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই রাজ্যে জীবনযাপনের কম খরচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছাকাছি সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান। যা সবমিলিয়ে বাংলাকে করে তুলেছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগের এক আদর্শ জায়গা। সেইসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বর্তমানে রাজ্যের রাজনৈতিক সুস্থিরতা। সেটাও এগিয়ে চলা বা বৃদ্ধির অন্যতম ভরসা। 
আমাদের কাছে কিন্তু সুযোগ রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে কীভাবে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নামীদামী সংস্থাগুলির কাছে গন্তব্য হয়ে উঠল, তার বিশ্লেষণ করা। যেখানে বোস্টন এবং অক্সফোর্ড ঐতিহ্যশালী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ, সেই মডেল সামনে রেখে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর কিন্তু অত্যন্ত নিখুঁত পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিল। এই পরিকল্পনা কিন্তু কলকাতা বা শিলিগুড়ি বা দুর্গাপুরের ক্ষেত্রে কার্যকরী করাই যায়। 
বাংলাকে শিক্ষাক্ষেত্রে আদর্শ জায়গা বা ‘‌এডুকেশন হাব’‌ হিসেবে গড়ে তুলতে যে পদ্ধতিতে এগোতে হবে সেখানে রয়েছে বহুবিধ কাজ। দেশে এবং বিদেশে যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আছে তাদের এখানে আনতে রাজ্য সরকারকে যেমন প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে তেমনি রূপায়ণ করতে হবে উচ্চশিক্ষার জন্য ভবিষ্যৎমুখী শক্তিশালী ও প্রয়োজনীয় নীতি। কাজে লাগাতে হবে ২০২০ সালের ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (এনইপি) বা জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে ব্যবস্থাগুলির কথা বলা হয়েছে সেগুলিকে। একইসঙ্গে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে ২০২৩–এ ইউজিসি’‌র যে নির্দেশিকা বা ‘‌ফরেন হায়ার এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া রেগুলেশনস’‌ রয়েছে সেগুলিও অনুশীলন করতে হবে। শিক্ষা জগতে, বিশেষত গবেষণার মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে যারা এগিয়ে আসবেন তাঁদের চিহ্নিত করে দিতে হবে উৎসাহভাতা। এর ফলে এই রাজ্য থেকে কমবে ‘‌ব্রেন ড্রেন’‌ বা মেধাবীদের অন্য রাজ্য বা দেশে চলে যাওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে প্রয়োজনীয় জমি। গোটা বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে একটা সার্থক রূপ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের উচিত একটি ‘‌টিম’‌ গঠন করা। যেখানে একদিকে যেমন থাকবেন সরকারি অফিসাররা, তেমনি থাকবেন শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও শিল্পপতিরা। এঁরা হবেন ‘‌থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’‌। এই থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বা টিমকে হতে হবে স্বশাসিত এবং এব্যাপারে রাজ্য সরকারকেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। 
এই উদ্যোগ একদিকে যেমন রাজ্যের ‘‌ইমেজ’‌–কে আরও বাড়িয়ে তুলবে তেমনি তা হয়ে উঠবে অর্থকরী। রাজ্যে পণ্য উৎপাদনের শিল্প স্থাপন বা এই ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়াটা যেমন জরুরি তেমনি সমবেত প্রচেষ্টায় বাংলার ‘‌এডুকেশন ইন্ডাস্ট্রি’‌কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও যথেষ্টই জরুরি। ‌কারণ, ভবিষ্যতে তার থেকেই পাওয়া যাবে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ। শিক্ষিত, আধুনিকমনস্ক তরুণ প্রজন্মই হয়ে উঠবে শিল্পের মেরুদণ্ড। সেইসঙ্গে দিতে হবে গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উৎসাহ। এর থেকে যে নির্যাস বেরিয়ে আসবে তা বাংলাকে নিয়ে যাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্বের জায়গায়। জাগিয়ে তুলবে বাংলা সম্পর্কে আরও উৎসাহ। বাড়িয়ে তুলবে তার সম্মান। পরিবর্তনের এই যাত্রা শুধুমাত্র বাংলার ঐতিহ্যকেই ফিরিয়ে আনবে না, গড়ে তুলবে বাংলার নতুন ভাগ্যও।




বিশেষ খবর

নানান খবর

নানান খবর

পুর এলাকায় জলের ঘাটতি খুঁজতে গিয়ে, হাতেনাতে অবৈধ জলের কারবার ধরলেন স্বয়ং পুরপ্রধান...

শনিবার শেষ হচ্ছে পৌষ মেলা, মেলায় কতজন গ্রেপ্তার হল জানেন? ...

বচসার জেরে চলন্ত বাসের স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিল অন্য বাসের চালক, ভয়াবহ দুর্ঘটনা ইসলামপুরে...

কালিম্পংয়ে অগ্নিকাণ্ড, ভস্মীভূত একাধিক বাড়ি ও দোকান, দমকল ও সেনার সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে...

জিনাতের পাশাপাশি বাড়তি মাথাব্যাথা এবার দলমার দামালরা, সতর্ক বনদপ্তর...

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, একাধিক রদবদলের কথা জানাল প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদ...

নাগাল মিলছে না জিনাতের, পুরুলিয়ার মানুষ শিউরে উঠছেন ২০১৫-এর কথা মনে করে ...

নেই চিকিৎসক, কম্পাউন্ডারই রোগী দেখেন সাহেবখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ...

কীরকম ছিল সুলতানি আমলের স্নানাগার? উত্তর পেতে যেতে হবে মালদায়...

অনুপ্রবেশ হতে পারে সীমান্তের এই ১০টি গ্রাম দিয়ে, আশঙ্কায় মুড়ে দেওয়া হল সিসিটিভি ক্যামেরায়...

অভিষেক ব্যানার্জির নাম করে কালনার পুর-চেয়ারম্যানকে ফোনে হুমকি! ৫ লাখ দাবি, গ্রেফতার ৩ ...

কেমন আছেন স্নাতকোত্তর চিকিৎসকরা? খোঁজ নিতে হাসপাতালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি ...

নিজের বন্দুক দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী বিএসএফ জওয়ান, মাথাভাঙার ঘটনা...

বর্ষ শেষে দু'দিন বন্ধ থাকবে যশোর রোড, ভোগান্তির আশঙ্কা...

মুর্শিদাবাদে রেল লাইনে 'নাশকতার' ছক! ধৃত ২ যুবক ...





রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া



11 23